আরো একবার পাক-ভারত যুদ্ধঃ শুধুমাত্র শ্রেণী সংগ্রামই সকল যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে

পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান আরো একবার যুদ্ধ শুরু করেছে এবং এখন পর্যন্ত দুই পক্ষই নিজেদের বিজয় দাবি করেছে। ৭মে দিবাগত রাতে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মীরে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স নয়বার আক্রমণ চালায়। প্রতিশোধ হিসেবে, পাকিস্তান ভারতের পাঁচটি ইন্ডিয়ান জেট বিমান ভূপাতিত করার দাবি করলেও ভারত তা অস্বীকার করেছে।

[Translated by: ফাহিম হাসান]

ভারত থেকে দাবি করা হয় যে, আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিলো পাকিস্তানে অবস্থিত সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জঈশ-ই-মুহাম্মদ এর ক্যাম্প, যারা ভারতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার জন্যে দায়ী। পাকিস্তান থেকে বলা হয়েছে, লাহোরের অদূরে মুরিদকে সহ ‘আজাদ’ কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে করা হামলায় ২৬ জন নিহত এবং ৪৬জন আহত হয়েছে । নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত মাসুদ আজহারের সহযোগী এবং পারিবারিক সদস্য রয়েছে।

এদিকে ৩টি রাফাল বিমান, ১টি মিগ-২৯ বিমান, ১টি সু-৩০ বিমানসহ হামলায় জড়িত মোট পাচটি ভারতীয় যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করার দাবি জানিয়েছে পাকিস্তান। সামনের দিনে পাকিস্তান পূর্নশক্তি দিয়ে যেকোনো আক্রমণের দাঁতভাঙা জবাব দিতে বদ্ধপরিকর রয়েছে। এই আকাশ হামলায়, কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তানের ডি ফ্যাক্টো বর্ডার তথা নিয়ন্ত্রণ লাইন বা লাইন অফ কন্ট্রোল বরাবর দুপক্ষের মধ্যে ভারী গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গিয়েছিলো। দুপক্ষই স্বীয় প্রতিপক্ষের বিশাল ক্ষয়ক্ষতি দাবী করেছে।

ভারত অধ্যুষিত কাশ্মীরে একটি পর্যটন এলাকা পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা হয়, যে হামলায় ২৬জন মারা গেলে তার সপ্তাহাখানেক পরে এই সামরিক আক্রমণ করা হয়েছে। ইন্ডিয়া এই সন্ত্রাসী হামলার জন্যে পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেও এই হামলায় পাল্টা জবাব দিতে বদ্ধপরিকর ছিলো, যার প্রস্তুতি পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে নেয়া হয়েছিলো।

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর, ভারত দুই দেশের মধ্যকার নদীর পানি বন্টন নীতি ‘সিন্ধু-জল চুক্তি (Indus Water Treaty IWT)’ একতরফাভাবে স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলো। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় দুইদেশের মধ্যে এই পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর অনেক যুদ্ধ-সংঘাতে টিকে থাকলেও এইবার তা হুমকির মুখে পড়েছে। দুই দেশ প্রতিশোধ নিতে অন্যান্য একশন নেবার পাশাপাশি পরস্পরের বিমান ফ্লাইটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

উভয় দেশের মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ যুদ্ধাবস্থার হিস্টেরিয়া এবং পরিস্থিতিকে সংকটময় করে তোলবার জন্যে নানান বক্তব্য প্রচার করেছে। এক্ষেত্রে মূল সংবাদ মাধ্যমগুলো আরো উঠে পড়ে লেগেছে, টিভির পর্দায় উপস্থাপকরা উভয়দেশের বিরুদ্ধে নিউক্লিয়ার যুদ্ধের মাধ্যমে পরস্পরকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার হুমকি এবং দখল করবার জন্যে বিষ ঢেলে দিচ্ছে। ত্যাক্ত-বিরক্ত সাধারণ-মেহনতি জনগণ এইসব হুমকি-ধামকিকে আর পরোয়া করছে না। ভারত-পাকিস্তানের বসবাসরত সাধারণ-মেহনতি জনতার মধ্যে পারস্পরিক শান্তি-সম্মানের সেন্টিমেন্ট কাজ করছে। অন্যদিকে, এসি লাগানো আরামদায়ক বেডরুমে বসে মজ-মাস্তি করা বিভিন্ন লুম্পেনগোষ্ঠী এবং মধ্যবিত্ত জাতীবাদী অন্ধরা প্রতিশোধ নেবার ছলে সিন্ধু নদে শত্রুপক্ষের রক্তের বন্যা বইয়ে দেবার আওয়াজ তুলছে।

দুই দেশের লুম্পেন শাসকেরা ভিতরে ভিতরে আন্তর্জাতিক শক্তি সমূহের কাছে ধরণা দিলে, চীন, মার্কিনসহ প্রধান শক্তিগুলো উক্ত অঞ্চলে নিজেদের স্বার্থকে প্রতিফলন করতে খুবই ডিপ্লোম্যাটিক ও “ধরি মাছ না ছুই পানি” মার্কা বক্তব্য প্রকাশ করেছে। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল ৬মে তাৎক্ষনিক জরুরি সভা আহ্বান করলে বিবাদমান দুপক্ষই তাদের পরিষ্কার অবস্থান তুলে ধরেছে। বরাবরের মতো খোজা ও সাম্রাজ্যবাদীদের তাবেদারী সংগঠন জাতিসঙ্ঘ ভারত-পাকিস্তানের উন্মাদনা থামাতে ব্যর্থ হয়ে নিজেদের নাম উজ্জ্বল করেছে।

বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাবক সমূহ

এই ঘটনাসমূহের তাৎক্ষনিক ফলাফলস্বরুপ, দুদেশের মধ্যকার সামরিক উত্তেজনা এখনো শান্ত হয়নি। নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে এমন প্রতিশোধমূলক যুদ্ধ ঘনীভূত হবার শঙ্কা এখনো আছে, যেখানে যুদ্ধ আরো কিছুকাল স্থায়ী হতে পারে। যেহেতু উভয়পক্ষই পারমানবিক শক্তিধর, তাই দেশীয়, আন্তর্জাতিকসহ সবমহল থেকেই দুদেশকে শান্ত থাকার আহ্ববান জানানো হয়েছে। তবে, এ অঞ্চলে শক্তিসমূহের ব্যালেন্স অসম হবার কারণে যুদ্ধ ঘনীভূত হবার আশংকা আছে, যদিও যুদ্ধে কিছুটা ভাটা,বিরতি দেখা দিতে পারে; তথাপি বাস্তবতার উপর ভিত্তির করে পুনরায় সামরিক অভিযান শুরু হতে পারে।

যদিও বিগত আট দশকে ভারত-পাকিস্তানের বৈরীভাব কখনোই পুরোপুরি শেষ হয়নি, তারপরও নানান কারণে বর্তমানে যুদ্ধের লেলিহান শিখা জ্বলে উঠেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো দুদেশেই অভ্যন্তরীণ সঙ্কট,যা দিনকে দিন গভীরতর হচ্ছে। উভয়দেশের মেহনতি জনতাই নিজেদের শাসকশ্রেণীর প্রতি ক্ষুব্ধ। আর এ দুর্বলতা ঢাকতেই দুই দেশের সরকার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সীমান্ত সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে, যাতে করে তাদের জনপ্রিয়তা কিছুটা ফিরে পাওয়া যায়,আর বর্হিশত্রুকে বিধ্বস্ত করে নিজেকে বিজয়ী দাবি করে তারা তাদের শক্তি ও জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে চায় যাতে করে তারা জনগনের উপর লুটপাট ও মাফিয়াতন্ত্র চালিয়ে যেতে পারে।

ভারতে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে মোদী উদ্বিগ্ন, সেখানে তার পরাজয়ের হবে বলে আশংকা রয়েছে।তাই তিনি যুদ্ধের হিস্টেরিয়া উঠিয়ে, যারা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতিশ কুমার ও মোদীর কোয়ালিশন সরকার কর্তৃক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর অক্ষমতার জন্যে মোদী সরকারকে ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করেছে,তাদের ভোট নিজের ব্যালটে ফিরিয়ে আনতে চাইছে ।

অতীতেও মোদী এই কৌশল একেবারে অব্যর্থভাবে প্রয়োগ করেছে। ২০১৯ সাল, ভারতের সাধারণ নির্বাচনের কিছু সপ্তাহ আগে মোদী পাকিস্তানের কয়েকটি জায়গায় সার্জিকাল স্ট্রাইক করে, যাতে তিনি কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের আস্তানা ও ট্রেইনিং ক্যাম্প ধ্বংস করার দাবি করেন। সেই সময়েও ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামা অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তান প্রতিশোধ নিতে ভারতের একটি ফাইটার জেট ভূপাতিত করলে বিমানের পাইলট আটক হয়, দিন কয়েকপর তাকে ফেরত পাঠানো হয়।

পাকিস্তান সে সময়ে নিজেদের জয় দাবি করে, যেখানে মোদী এবং তার পার্টি সেই সামরিক সংঘাতকে দাবার চালের মতো কাজে লাগিয়ে আকাশ-কুসুম ব্যবধানে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলো। তবে জয়ের আরো কিছু কারণ ছিলো, বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক বন্ধ্যাত্ব এবং পুরোপুরিভাবে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া ছিলো অন্যতম, বিশেষত কমিউনিস্ট পার্টিগুলো এক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য। তারা মোদীর লিবারেল পলিসির বিকল্প হিসেবে ইন্ডিয়ান বুর্জোয়াদের আঘাত করতে পারে এমন বিপ্লবী কর্মসূচি তুলে ধরতে পারেনি। যদিও মোদীর কুরুক্ষেত্র-যুদ্ধ কৌশলটা বরাবরই ভারতীয় এলিটদের রক্ষাকবচ।

এখন,আরো একবার, মোদী পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ নামক গুটিকে তার নিজের হারানো জনপ্রিয়তা এবং ভোট বাক্স ফেরানোর কবচ হিসেবে ব্যবহার করছে। ২০২৪ সালে গত লোকসভা (ভারতের পার্লামেন্টের নিন্মসভা) নির্বাচনে মোদীর সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন হারানো আসলে জনপ্রিয়তায় ভাটাকে নির্দেশ করে এবং তাকে সরকার গঠন করতে কোয়ালিশন পার্টনার দলের উপর নির্ভর করতে হয়েছিলো।

প্রায় ১৩০ মিলিয়ন মানুষের বাসস্থল বিহার ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোর একটি। মোদির অংশীদার, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতিশ কুমার গত ২০১৫ সাল থেকেই নির্বাচনে নিজের দাপট ধরে রেখে ছিলেন কিন্তু এখন আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতা হাত ছাড়া হবার টেনশনে মাথায় ঘাম ছুটছে। বিহারে একটা নির্বাচনী পরাজয় মোদীর ক্ষমতার খেলায় শেষ বাশি বাজাতে পারে। আর এটা ঠেকাতেই মোদী হাতে থাকা সম্ভাব্য সকল চাল দিচ্ছে এবং একাবারে উঠেপড়ে লেগেছে।

মোদীর দুর্বলতা তখনই প্রকাশ পেয়েছিলো, যখন সে এবং তার দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রস্তাবিত বর্ণ-জাত ভিত্তিক শুমারির তীব্র বিরোধিতা করে। বিরোধী দলগুলো এই ইস্যুটা তুলেছে শুধুমাত্র নীচু-দলিতে সম্প্রদায়ের জন্যে সরকারি চাকুরিতে আরো কোটা বরাদ্দ করে তাদের ভোট নিজেদের ব্যালটে আনতে। এখন, নির্বাচনের মোড় ঘুরাতে এই ইস্যুতে মোদী ইউ-টার্ন নিয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়া শক্তিগুলোর মধ্যকার ভারসাম্য

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইন্দো-প্যাসিফিক জোনে চিনকে মোকাবেলা করতে গত দশকেই ভারতের সাথে স্ট্রাট্যাজিক ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে এবং ভারতের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এজন্যেই মোদির ভারত সরকার বড়াই করে দুর্বল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, যে দেশটি জন্মলগ্ন থেকেই আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের নিকৃষ্ট তাবেদার ছিলো, কিন্ত পাকিস্তান একটি বিশ্বস্ত প্রভু হারায়, বিশেষ করে ২০২১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিনীদের পরাজয়ের পর।

খাজা আসিফ, পাকিস্তানের সামরিক মন্ত্রী সম্প্রতি একটি বিদেশী টিভি চ্যানেলে কথা বলার সময় এই প্রসংগে মুখ খোলেন এবং সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের ভুমিকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, হ্যা, পাকিস্তান জংগিবাদকে সহায়তা দিয়ে এসেছে, কিন্তু এটা খুবই নোংরা কাজ যা আমেরিকা এবং ব্রিটিশদের কথায় করে আসছিলো, তথাপি এটি চরম ভুল।

যাই হোক, তিনি এই কথা ব্যখ্যা করলেন না যে এই নোংরা সহায়তা দিতে কারা পাক-সরকারকে ম্যান্ডেট দিয়েছিলো, কেনো এই “ভুল” করা লোকেরা এখনো ক্ষমতায় আছে, পাকিস্তান আইন মোতাবেক কোনো প্রকার শাস্তি ভোগ ছাড়াই। এমনকি এই বক্তব্য প্রতিফলন করছে, পাকিস্তানি শাসকশ্রেনীকে তার সাম্রাজ্যবাদী প্রভু পুরাতন গোলাম ছেড়ে ভারতকে নতুন গোলাম বানানোর ফলে প্রাপ্ত হতাশা। প্রতিক্রিয়াস্বরুপ, পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগতভাবে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে দিনদিন চীনের মুখাপেক্ষী হতে বাধ্য হচ্ছে।

এমুহুর্তে, মোদি দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে টেক্কা দিয়ে ভারতের অবস্থান ধরে রাখতে এই পরিস্থিতিকে কাজ লাগাচ্ছে। আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের রদবদলের পাশাপাশি চিনের পরাশক্তি হিসেবে আত্নপ্রকাশকে কেন্দ্র করে চীন ও আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের বিরোধিতা, ভারতীর মহাসগর ও দক্ষিণ এশিয়াতেও ক্ষমতার ভারসাম্য উল্লেখ্যযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।

চীন ক্রমাগতভাবে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর উপর তার প্রভাব বলয় বিস্তার করছে এবং নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মালদ্বীপে নানান বৃহৎ প্রজেক্ট চালু করছে। পাকিস্তানে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC) হচ্ছে চায়নার “বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ” এর একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রধান প্রজেক্ট। সম্প্রতি চিনের একটি রিপোর্টে দেখা যায়, বর্তমানে পাকিস্তানই চিনের কাছে সবচেয়ে ঋণগ্রহণকারী দেশ।

চীন অবশ্য ঘোষণা করেছে তিব্বতে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বাধ নির্মাণ করছে, যা পূর্ব-ভারতে ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর জলপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এসকলেরই জন্যে ভারত-চীনের মধ্যকার উত্তেজনা আরো গভীর হচ্ছে, অন্যদিকে, যেখানে ভারত-চীনের বাৎসরিক বাণিজ্য ১৫০ বিলিয়নে গিয়ে দাড়িয়েছে। ফলত, দুই শক্তি পরস্পরের উপর আরো নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে ।

শ্রমিকশ্রেণীর উপর মোদী-সরকারের আক্রমণ

তবে, মোদীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ভারতে শ্রমিক এবং কৃষকদের আন্দোলন, যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যেই ২০ মে ভারতব্যাপী একটি সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, যার জন্যে কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যদিও বিগত বছরগুলোতে, অনেক সাধারণ ধর্মঘট হয়েছে, প্রতিবারই মোদী শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও ঘৃণা আগের থেকে বেড়েছে, প্রায় একটা বিস্ফোরন্মুখ পর্যায়ে গিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের আপাত অর্থনৈতিক সফলতা জনগনের ক্রোধানলে ঘি ঢেলেছিলো, যা দেরিতে না হয়ে আগেভাগেই আগ্নেয় বিস্ফোরণের মতো ফেটে পড়তে পারতো।

বাঙলাদেশ, ইন্ডিয়ার তুলনায় ছোট অর্থনীতির দেশ,‘উদীয়মান টাইগার’ হিসেবে বিবেচিত, স্বৈরাচারী হাসিনার অধীনে এই অর্থনীতি দ্রুত বিকশিত হচ্ছিলো। কিন্ত অনেকেই পিলে চমকে উঠলো, যখন হঠাৎ গণআন্দোলন অগ্নি-বিস্ফোরণে রুপ নিয়ে হাসিনার শাসনব্যাবস্থাকে জ্বালিয়ে দিয়ে উৎখাত করলো।

একই পরিস্থিতি ভারতে ঘটতে পারতো। মোদীর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার নিয়ে বড়াই এবং বিশ্বে ভারত চতুর্থ বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও, এবছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফাপা বেলুন ফুটে চুপসে যেতে পারতো।

ট্রাম্পের চিনের উপর শুল্কারোপ ইন্ডিয়ারই কাজে লাগেছে, সেদেশে এপলসহ অনেক কোম্পানি তাদের ব্যাবসা বাণিজ্য স্থানান্তর করছে। কিন্তু, এতে ভারতীয় শ্রমিকশ্রেণী যাদের উপর মোদী আক্রমণ করেছে এন্টি-লেবার আইন করে, তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই বাস্তবতায় শ্রমিকশ্রেণীর লড়াই-সংগ্রাম আরো বেশি সরকার বিরোধী অগ্নীরুপ লাভ করতে পারে।

ইতোমধ্যেই, ২০২১সালের বিশাল কৃষক আন্দোলনে মোদী পরাস্ত হয়েছিলো, তখন জারীকৃত আগ্রাসী কৃষি আইন,যা বড় ব্যবসায়ীক ফার্মগুলোকে একচেটিয়া সুবিধা দিয়ে ভারত জুড়ে লক্ষ লক্ষ কৃষক ও তার পরিবারকে পথে বসিয়ে দিতে পারতো, তা মোদি বাতিল করতে বাধ্য হয়।

মোদী অবশ্য বেতন হ্রাস, ব্যাপক বেসরকারিকরণ, সরকারী কর্মী হ্রাসকরণ, ইউনিয়নকরার অধিকার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি নানানভাবে শ্রমিকশ্রেণীর উপর আক্রমণ করছে। এতে করে ভারতীয় বুর্জোয়া, যাদের সম্পদ বেড়ে নজিরহীন পর্যায়ে গিয়েছে, তাদের জনগনকে শোষণ করতে সুবিধা হচ্ছে।

মোদীর শাসনের এক দশকেরও বেশি সময় পর, ভারতের শীর্ষ ১% লোক সমগ্রদেশের ৪০% সম্পদের মালিক , যেখানে তলানিতে থাকা ৫০% লোকের সম্পত্তি মাত্র ৩ শতাংশ। কম করে হলেও ১২৯ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। মোদী যুদ্ধ বাধিয়ে মেহনতি মানুষের এই ক্ষোভের তীর বর্হিশত্রুর দিকে তাক করাতে চাইছে। সে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের ধোয়া তুলে তার শাসনকে জারি রেখে ভারতীয় বুর্জোয়াকর্তৃক দেশ লুটপাট ও হজম করবার যজ্ঞতে সাহায্য করছে।

প্রসঙ্গক্রমে, কমিউনিস্ট পার্টিগুলো মোদির হাতের পুতুল হয়ে তাকে সাপোর্ট করতে অত্যন্ত বেহায়াজনক, জাতিবাদী স্টেটমেন্ট দিয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (CPI) থেকে বলা হয়, “সিপিআই মনে করে ভারত সরকারের এমন সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডের কড়া জবাব দেয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিলো না ”, মোদীকে “যুদ্ধের তীব্রতা ও ক্যালিবার বৃদ্ধিমূলক পন্থা গ্রহণে” শুভেচ্ছা জানায়, সকল দলের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে মোদিকে আহ্বান জানায়।

কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া(মার্ক্সবাদী) (CPIM) - তুলনামূলক বেশি বামপন্থা অবলম্বনকারী - একইভাবে সরকারকে প্রশংসা করে, পাকিস্তানের উপর আরো “বল প্রয়োগ” করতে ও জাতীয় অখন্ডতা বজায় রাখতে আরো কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানায়। এটা হলো নিজে দেশে যুদ্ধবাজ ও জাতিবাদী শাসকের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টিগুলো আন্তর্জাতিক দায়িত্ব এবং কাশ্মীরের জনগনের আত্ননিয়ন্ত্রণ অধিকারের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা।

পাকিস্তানী শাসক শ্রেণী

অপরদিকে, পাকিস্তানী শাসকশ্রেণী এই যুদ্ধ থেকে মোদীর থেকেও বেশি লাভবান হবে, তাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠা গনআন্দোলনের জোয়ারকে থামিয়ে দিতে এই যুদ্ধকে ব্যবহার করবে। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের পাকিস্তানের উপর আদেশ জারির পর দেশটির অর্থনীতি গভীর সংকটে এবং দেউলিয়া হয়ে মুখে থুবড়ে পড়ছে।

নিজেদের লুন্ঠনতন্ত্র এবং সম্পদ আত্মসাৎ টিকিয়ে রাখতে শাসকশ্রেণী এবং আন্তর্জাতিক ফাইনানশিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো দেশব্যাপী ব্যাপকহারে স্কুল,কলেজ ও হাসপাতাল বেসরকারীকরণ করে শ্রমিকশ্রেণীর উপর এক আঘাত হেনেছে। এই সেক্টরগুলো থেকে তুমুল আন্দোলন-প্রতিবাদ হচ্ছে, এবং ভারতের হামলার একদিন আগে পাঞ্জাবেরজুড়ে বিভিন্ন শহরে তরুণ ডাক্তারসহ হাজার-হাজার স্ব্যাস্থ্যসেবা কর্মীরা বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।

দেশটির সমগ্র অঞ্চলজুড়ে বিভিন্ন আন্দোলন চলমান, বিশেষ করে জাতিগত শোষণ এবং রাষ্ট্রিয় দমন-পীড়ন বিরুদ্ধে বালুচ জনগনের আন্দোলন উল্লেখযোগ্য, যা পাকিস্তান সরকারের ব্যাপক আর্মি অভিযানের মাধ্যমে সহস্র গুম-খুন করে সমগ্র জনসংখ্যাকে ধ্বংস করা সত্ত্বেও দাবিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, এইসকল অপারেশন ও গ্রেফতার উল্টো বালুচিস্তানজুড়ে আরো বেশি আন্দোলনে জোয়ার এনেছে।

এসকল গনআন্দোলন আসলে পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে এবং জাতীয় মুক্তির প্রশ্নে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দেউলিয়াত্ব ও প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকার প্রতিফলন। বস্তুত, সাম্প্রতিক জাফর এক্সপ্রেস হাইজ্যাক, যে ট্রেনটি সামরিক কর্মীসহ শ-খানেক যাত্রী বহন করছিলো, কারো কারো মতে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে আরো ইন্ধন জুগিয়েছে।

পাকিস্তান ইন্ডিয়াকে বালুচ গেরিলাদের সাহায্য করার জন্যে দোষারোপ করেছে এবং প্রতিশোধ নেবার প্রতিজ্ঞা নিয়েছে। অনেক বিশ্লেষক পেহেলগামে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাকে জাফর এক্সপ্রেস-হাইজ্যাকের পাল্টা জবাব বলে দাবি করছেন।যাই হোক, ভারতের কথিত সাপোর্টে টিকে থাকা এইসব সশস্ত্র গোষ্ঠী ও আফগানের তালেবানী রাষ্ট্র পাকিস্তানী শাসকশ্রেণীর কাছে প্রধান হুমকি নয়, বালুচিস্তান জুড়ে সহস্র-দশক মানুষের গণআন্দোলনই আসল হুমকি।

নতুন খাল খনন ও নদীর পানি বন্টনকে কেন্দ্র করে সিন্ধ অঞ্চলে গর্জে উঠা গণআন্দোলন পাকিস্তানী শাসকদের জন্যে আরেকটি হুমকি। পাকিস্তান সরকার সিন্ধু নদে নতুন করে ছয়টি খাল খননের সিদ্বান্ত নিয়েছে, যার কয়েকটি চোলিস্তান নামক মরুভূমিতে পানি সরবরাহ করবে।

এটি চার বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের কর্পোরেট কৃষির প্রজেক্ট, যা আর্মি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাংক এর ব্যাকআপ দিচ্ছে। এটা সিন্ধ ও পাঞ্জাব অঞ্চলের কিষাণদের মারাত্তকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যারা আগে থেকেই পানি সংকটের মুখোমুখি। নতুন খাল খননের মাধ্যমে পানির সাপ্লাই অন্যত্র সরালে শত-সহস্র কৃষকদের রুটিরুজি ধ্বংস হতে পারে।

এরই মধ্যে, পাক-সরকার কৃষকদের উপর অবর্নণীয় আক্রমণ করেছে। যেসকল কৃষক প্রচলিত ফসল যেমন গম চাষ করেছে, তাদেরকে নিন্মমূল্যে বাজারে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য করে পথে বসানো হয়েছে।

এই পরিস্থিতি কৃষকদের গণআন্দোলনে ক্ষেপিয়ে তোলে যার শুরু হয় ১৬ই এপ্রিল এবং আন্দোলনের ফলে পাঞ্জাব ও সিন্ধ অঞ্চলের সাথে দেশটির যোগাযোগের প্রধান রুটটি ব্লক করে দেয়া হয়।এতে, আন্দোলনের সময়ে সপ্তাহখানেক দেশটিতে পণ্য পরিবহন একেবার নাকাল হয়ে পড়ে। কোয়ালিশনের প্রধান অংশীদার, সিন্ধ অঞ্চলে ক্ষমতাসীন, পাকিস্তান পিপলস পার্টির(PPP) প্রবল চেষ্টা সত্ত্বেও সরকার এই দ্বন্দ্ব নিরসনে ব্যার্থতার পরিচয় দেয়।

বিপুল জনগণ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে একে আরো শক্তিশালী করে তুলছিলো এবং তারা জেনারেল ও পিপিপি’র দুই নম্বরী ভূমিকার সমালোচনা করছে। পিপিপি এবং অন্য দলসমূহ এই পরিস্থিতিকে পাঞ্জাব-বিরোধী জাতিগত বিদ্বেষে রুপে দেবার চেষ্টা করলেও খুব একটা সফল হয়নি।

শেষমেশ, সরকার আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেয়, যদিও তারা এজন্যে আন্দোলনের চাপ নয় বরং ভারতের একপেশে সিন্ধ-নদ চুক্তি বাতিলের বানোয়াট কারণ দেখিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই, পিপিপি’র নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো প্রচন্ড হুশিয়ারের সাথে মোদিকে বলেন,“সিন্ধু দিয়ে হয় আমাদের পানি, নয়ত তাদের রক্ত বইবে

ইতোমধ্যে, সে এবং তার দল পাকিস্তানের লক্ষ-লক্ষ শ্রমিক-কৃষকের ঘাম ও রক্তে নিজেদের হাত ভিজিয়েছে। এই যুদ্ধ নিশ্চিতরুপে তাকে এবং শাসকশ্রেণীর জোটে থাকা তার সাঙ্গপাঙ্গদের শ্রমিকদের ক্ষোভ-আন্দোলন অন্যদিকে ঘোরাতে সাহায্য করবে।

কাশ্মীরের গণআন্দোলন

একই কথা পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যেখানে বিশাল গণআন্দোলন চলছে, গতবছর ১০ হাজার মানুষ দুই দফা আন্দোলনে করেছিলো এবং শাসকশ্রেণীকে একপ্রকার নাকানি চুবানি দিয়েছে

কাশ্মীরে আওয়ামী একশন কমিটির (Awami Action Committee) নেতৃত্বে সরকারকর্তৃক মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনে জয়লাভ করে, সরকার বিদ্যুৎ এবং গমের ময়দার মূল্য ব্যাপক হারে কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়। ইউনিট প্রতি ৫০রুপির বিদ্যুৎ আন্দোলনে পর কমে দাড়িয়েছে ইউনিট প্রতি ৩ রুপিতে। এই আন্দোলন এখনো তার দৃঢ়তা বজায় রেখেছে, ১৩মে উক্ত আন্দোলনে পাকিস্তানী রাষ্ট্রের গুলিতে শহীদদের ১ম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি সাধারণ মিটিঙের আয়োজন করা হয়েছে।

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে এই আন্দোলন গুরুত্বেরসহিত আলোচিত হচ্ছে এবং এ থেকে অনুপ্রানিত হয়ে ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরেক দফা গণ আন্দোলনের আয়োজন করা হচ্ছে।

মোদী কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে কাশ্মীর ইস্যু “সমাধান” করার দাবি করে নিজের ঢোল পিটিয়ে যাচ্ছে। সে ২০১৯ সালে ভারতীয় সংবিধানের বিশেষ আর্টিকেলকে (আর্টিকেল ৩৭০) বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এবং একে অমান্য করে কারফিউ, গণগ্রেফতারের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনগনের বিপ্লবী আন্দোলনকে দমন করে নিজেকে হামবীর ভাবছে।

কাশ্মীরে অনেক সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা আছে কিন্তু মোদি এরই মধ্যে ট্যুরিস্ট এবং ব্যবসার হাল ঘোরাতে চেষ্টা করছে। কাশ্মীরে তথা-কথিত নির্বাচিত সরকার (মেরুদন্ডহীন সরকার) বসিয়ে “স্বাভাবিকতা” ফিরিয়ে আনা হলেও, কাশ্মীরের ভাগ্যকাশে গনআন্দোলনের ঝড়ের পূর্বাভাস বইছে, যা মূলত আজাদ-কাস্মীর ও গিলগিট-বালতিস্তানের আওয়ামী একশন কমিটির নেতৃত্বে সফল আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রানিত।

কাশ্মীর প্রশ্নকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার

আরেকবার, দুই দেশের শাসকশ্রেনীরা নিজেদের ও কাশ্মীরের মেহনতি জনগনের উপর আক্রমণ এবং কাশ্মীরে শোষণ-দখলদারিত্ব বজায় রেখে, এই যুদ্ধে কাশ্মীর প্রশ্নকে হীনস্বার্থের গুটি হিসেবে ব্যবহার করছে।

শুধুমাত্র দুই দেশের শ্রমিকশ্রেণীর ঐক্যবদ্ধ লড়াই শাসকশ্রেণীর হীন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে নস্যাৎ করতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, দুদেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলো পুরোপুরি শাসকশ্রেণীর হাতের পুতুলে রুপ নিয়েছে, কাশ্মীর ও যুদ্ধ বিষয়ে রাষ্ট্র এবং শাসকশ্রেণীর সাথে তারা সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে।

বস্তুত, দুদেশেই কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতা পুজিবাদী রাষ্ট্র উচ্ছেদের কথা বলেনি, যা সব যুদ্ধ, জাতিগত শোষণ, সন্ত্রাসবাদ যা কিছু উক্ত অঞ্চলের জনগনকে বাধ্য হয়ে সহ্য করতে হচ্ছে সেসবের মূল কারণ।

উপমহাদেশের বিভাজন ও পরবর্তীতে পুজিবাদী রাষ্ট্র গঠনের ফলে দুদেশের শাসকশ্রেণি ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোই উপকৃত হয়েছে। যেখানে দুদেশের মেহনতি জনগনকে চরম দারিদ্র‍্য, কর্মহীনতা, দুর্দশার মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে, সেখানে উভয় দেশের শাসক এলিটরা নরম গদিতে সুখের নিদ্রা যাচ্ছে। দুই দেশের শাসকেরা অনেকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে এবং হাজারখানেক মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। যদি তারা যুদ্ধ নাও করে, তবে তারা দেশের জনগণের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যর বিনিময়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে নিজেদের অস্ত্রাগার নির্মাণ করে।

পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসেছে, দুই দেশেরই অত্যাধুনিক অস্ত্র ও নিউক্লিয়ার শক্তি রয়েছে, ওদিকে দুপ্রান্তেই চিকিৎসার অভাবে, অনাহারে প্রতি বছর শত-সহস্র মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। নিজেদের হরিলুট আর পকেট ভরানোর ধান্ধা চালিয়ে যেতে তারা ধর্মীয় রাজনীতি, জাতীয়বাদ ও অন্যান্য বিদ্বেষমূলক আদর্শের ধোয়া উঠিয়ে এই অত্যাচার ভিত্তিক ব্যাবস্থাটাকে টিকিয়ে রাখতে চায়।

এই যুদ্ধ চিরতরে শেষ করতে দুই দেশের শ্রমিকশ্রেণীকে নিজ-নিজ শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে শানিত সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে এবং রক্তপাত ও সন্ত্রাসবাদের ভিত্তিমূলে থাকা পুজিবাদী ব্যবস্থার পতন ঘটাতে হবে।

২০মে, ভারত জুড়ে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন কৃষাণ ও মজদুর এক সাধারণ ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আর এটাই সেই মুহুর্ত যখন ধর্মঘটের নেতারা যুদ্ধকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে শ্রমিকশ্রেণীর সংহতিমূলক কর্মসূচি ঘোষণা এবং মোদির হিন্দুত্ববাদী লুটেরা শাসন ব্যবাস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে এক সুসংহত শ্রেনীযুদ্ধের সূচনা করতে পারে। আপাতত চলমান দাবীদাওয়ার পাশাপাশি কৃষাণ-মজদুরের রাজনৈতিক ক্ষমতার দাবী অবশ্যই সামনে আনতে হবে, আর বুর্জোয়া শ্রেণীর স্বার্থে হানতে হবে সুদৃঢ় আঘাত।

পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, সেদেশের শ্রমিকশ্রেণিকে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সংহতি, প্রতিবাদ ও র‍্যালী আয়োজন করতে হবে, আর সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের ডানার নিচে বেড়ে উঠা পাকিস্তানি শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে শানিত শ্রেনী যুদ্ধ।

উপমহাদেশজুড়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জোয়ারই শ্রমিকশ্রেণীর মুক্তির পথ বাতলে দিতে পারে; পাক-ভারতকে বিভাজনের এই চাপিয়ে দেয়া সীমানা ও দেশভাগের অন্যায়কে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে। শুধুমাত্র দক্ষিণ এশীয় সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশনই পারে যুদ্ধ, দারিদ্র্য, বেকারত্বের ইতি টানতে এবং কাশ্মীরের জনগনের মুক্তির দিশা দিতে। এই বিপ্লবই অঞ্চলজুড়ে উন্নতি ও সমৃদ্ধির এক নয়া জামানার সূচনা করতে পারে, হয়ে উঠতে পারে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ববিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ, যা পৃথিবীর বুক থেকে পুজিবাদের নাম-নিশানা মিটিয়ে দিবে।

ভারত-পাকিস্তানের শ্রমিকশ্রেণীর ঐক্য দীর্ঘজীবী হোক!

যুদ্ধ নয়, চাই শ্রেণীসংগ্রাম!

ভারত-পাকিস্তানে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সূচনা করুন!

দক্ষিণ এশীয়ার সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশন গঠন করুন!

দুনিয়ার মজদুর, এক হও!